ভাষা আন্দোলন এবং ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন ছাত্রসমাজ

মৃধা মোহাম্মদ আল-আমিন : বাংলাদেশের উত্থানে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনেক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন গুলোর কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করতে হয় তা হলোঃ ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, আমাদের প্রানের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ৯০ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এ সব আন্দোলনে অনেক রক্ত ঝরেছে, যে রক্তের মজবুত ভিতের উপর দাড়িয়ে আছে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সবগুলো আন্দোলনেই প্রাণ দিয়েছে ছাত্র, যুবক, শ্রমিক সহ অগণিত মেহনতি মানুষ।


যে আন্দোলন হতে মূলত আমরা সকল আন্দোলন ও সংগ্রামের সাহস ও অনুপ্রেরণা সঞ্চয় করেছি তা মূলত ৫২’র ভাষা আন্দোলন। যাকে বলা হয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম আন্দোলন। যা বাংলাদেশ সহ সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে চির জাগরূক দীপ্তিময় প্রজ্বলিত আলোক শিখা। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররা তাদের দেশপ্রেমের প্রথম বীরত্বকাব্য রচনা করে।
কমিউনিস্ট ভাবধারার ছাত্রনেতা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় “Dhaka University State Language Movement Committee. ” এই কমিটিই ভাষা আন্দোলনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্ররা ৪ঠা ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে মিছিল বের করে। ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ পাকিস্তান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ তাদের একটি মিটিংয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তারা ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। এর পিছনে মূল কারণ ছিলো, তারা রাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বেশী চিন্তিত ছিলেন। সেই কারণে ছাত্ররা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এ সিদ্ধান্ত কে মেনে নিতে পারেনি। তারা পূর্বে থেকেই ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য মনে মনে প্রস্তুত ছিলো। যেহেতু মুসলিমলীগ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার বিপক্ষে, সেহেতু পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেউ ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র সভায় সভাপতিত্ব করলে ১৪৪ ধারা ভাঙার বিপক্ষে মত দিতে পারে তাই গাজিউল হককেই আমতলার সভায় সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। যেহেতু পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তখন গ্রেফতার আতঙ্ক চলছিলো তাই পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া ছিলো একজন গ্রেফতার হলে তার অনুপস্থিতিতে কে সভাপতিত্ব করবে। এই ইতিহাস জানা যায় ” ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস” নামক গ্রন্থে।
২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের মধ্যে আব্দুল মতিন ও গাজিউল হকের নেতৃত্বে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আবুল বরকত শহীদ হন। একই সাথে রফিকউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল জব্বার নামে দুই যুবক শহীদ হন। এই আন্দোলনে ছাত্রদের গ্রেফতার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। গাজিউল হক, অলি আহাদ গ্রেফতার হন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররা প্রধান ভূমিকা পালন করেন, যার ফলশ্রুতিতে আমরা বাংলাকে পেয়েছি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে এবং বিশ্বব্যাপী এ আন্দোলন আমাদের অন্যতম জাতিগত পরিচয়। ১৯৯৯ সালে UNESCO ২১ শে ফেব্রুয়ারি কে আঅন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষনা দিয়েছে যা আমাদের রক্তের স্বীকৃতি স্বরুপ, যার কৃতিত্ব ছাত্রদের অবশ্য প্রাপ্য।
৫২’র ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের পর বলা যায়, এ জাতি তার স্বরুপে ফিরেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, যা বাঙালী জাতির ইতিহাসে আরেক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রদের অসামান্য অবদান রয়েছে। তৎকালীন ছাত্রনেতারা এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আরেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল এবং যা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ সৃষ্টির পাথেয়। গণঅভ্যুত্থানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু)।
২০ জানুয়ারি সারা শহর উত্তাল হয়ে ওঠে। ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ” আসাদ ” নিহত হয়। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দিয়ে বানানো হয় পতাকা। ছাত্ররা আসাদ কে নিয়ে কবিতা লেখেন, ক্ষোভের অনলে জ্বলতে থাকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি গুলিবর্ষণে নবম শ্রেনির ছাত্র মতিউর এবং ছুরিকাঘাতে রুস্তম নামের একজন নিহত হলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এই গণঅভ্যুত্থানের প্রবল চাপে আইয়ুব খান ঘোষণা করেন তিনি আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং নিরাপত্তা আইনে আটক ৩৪ জনকে মুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৬৯ একটি উজ্জলতম ইতিহাস হিসাবে চিরকাল থাকবে যাতে সারা দেশের ছাত্ররা অবদান রেখেছিল। ৬৯’র এর গণঅভ্যুত্থানে সেদিন সকল ছাত্র সংগঠন একত্রিত ভাবে তাদের নৈতিক কর্তব্য পালন করে ভ্রাতৃত্বের পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তী আন্দোলন গুলোতেও এই ভ্রাতৃত্ব আমাদের সাফল্যের সহায়ক হিসাবে কাজ করেছে। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা নজীর স্থাপন করেছিল। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে মূল ভূমিকা পালন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ “ডাকসু’র ” ছাত্রনেতারা সহ প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন যাদের নাম এদেশ মনে রাখবে আজীবন। সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা তাদের জীবন বাজি রেখে সংগ্রামের সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৫২ এবং ১৯৬৯ সালে সারা বাংলার ছাত্রসমাজ জাতিগঠনে অসমান্যতার পরিচয় দিয়েছে, যা আমাদের অন্য সকল আন্দোলনের জন্য প্রেরণা। এভাবে যদি বর্তমান ছাত্র সমাজ নীতির পক্ষে আপোষহীন থেকে নেতৃত্ব দেয় তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেই।
লেখকঃ সংগঠক।
আ/স/১০/০২/২০২৫/আকাশ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাষা আন্দোলন এবং ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন ছাত্রসমাজ

Update Time : ১১:৩২:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মৃধা মোহাম্মদ আল-আমিন : বাংলাদেশের উত্থানে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনেক আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন গুলোর কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করতে হয় তা হলোঃ ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, আমাদের প্রানের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং ৯০ এর গণতান্ত্রিক আন্দোলন। এ সব আন্দোলনে অনেক রক্ত ঝরেছে, যে রক্তের মজবুত ভিতের উপর দাড়িয়ে আছে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সবগুলো আন্দোলনেই প্রাণ দিয়েছে ছাত্র, যুবক, শ্রমিক সহ অগণিত মেহনতি মানুষ।


যে আন্দোলন হতে মূলত আমরা সকল আন্দোলন ও সংগ্রামের সাহস ও অনুপ্রেরণা সঞ্চয় করেছি তা মূলত ৫২’র ভাষা আন্দোলন। যাকে বলা হয় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম আন্দোলন। যা বাংলাদেশ সহ সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে চির জাগরূক দীপ্তিময় প্রজ্বলিত আলোক শিখা। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররা তাদের দেশপ্রেমের প্রথম বীরত্বকাব্য রচনা করে।
কমিউনিস্ট ভাবধারার ছাত্রনেতা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে গঠিত হয় “Dhaka University State Language Movement Committee. ” এই কমিটিই ভাষা আন্দোলনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্ররা ৪ঠা ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডে মিছিল বের করে। ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ পাকিস্তান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ তাদের একটি মিটিংয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে কি হবে না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তারা ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। এর পিছনে মূল কারণ ছিলো, তারা রাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বেশী চিন্তিত ছিলেন। সেই কারণে ছাত্ররা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এ সিদ্ধান্ত কে মেনে নিতে পারেনি। তারা পূর্বে থেকেই ১৪৪ ধারা ভাঙার জন্য মনে মনে প্রস্তুত ছিলো। যেহেতু মুসলিমলীগ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার বিপক্ষে, সেহেতু পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের কেউ ২১ ফেব্রুয়ারির ছাত্র সভায় সভাপতিত্ব করলে ১৪৪ ধারা ভাঙার বিপক্ষে মত দিতে পারে তাই গাজিউল হককেই আমতলার সভায় সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। যেহেতু পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তখন গ্রেফতার আতঙ্ক চলছিলো তাই পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া ছিলো একজন গ্রেফতার হলে তার অনুপস্থিতিতে কে সভাপতিত্ব করবে। এই ইতিহাস জানা যায় ” ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস” নামক গ্রন্থে।
২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের মধ্যে আব্দুল মতিন ও গাজিউল হকের নেতৃত্বে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আবুল বরকত শহীদ হন। একই সাথে রফিকউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল জব্বার নামে দুই যুবক শহীদ হন। এই আন্দোলনে ছাত্রদের গ্রেফতার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। গাজিউল হক, অলি আহাদ গ্রেফতার হন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররা প্রধান ভূমিকা পালন করেন, যার ফলশ্রুতিতে আমরা বাংলাকে পেয়েছি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে এবং বিশ্বব্যাপী এ আন্দোলন আমাদের অন্যতম জাতিগত পরিচয়। ১৯৯৯ সালে UNESCO ২১ শে ফেব্রুয়ারি কে আঅন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষনা দিয়েছে যা আমাদের রক্তের স্বীকৃতি স্বরুপ, যার কৃতিত্ব ছাত্রদের অবশ্য প্রাপ্য।
৫২’র ভাষা আন্দোলনের সাফল্যের পর বলা যায়, এ জাতি তার স্বরুপে ফিরেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, যা বাঙালী জাতির ইতিহাসে আরেক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্রদের অসামান্য অবদান রয়েছে। তৎকালীন ছাত্রনেতারা এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আরেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল এবং যা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ সৃষ্টির পাথেয়। গণঅভ্যুত্থানে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(ডাকসু)।
২০ জানুয়ারি সারা শহর উত্তাল হয়ে ওঠে। ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া মিছিলে গুলিবর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ” আসাদ ” নিহত হয়। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট দিয়ে বানানো হয় পতাকা। ছাত্ররা আসাদ কে নিয়ে কবিতা লেখেন, ক্ষোভের অনলে জ্বলতে থাকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি গুলিবর্ষণে নবম শ্রেনির ছাত্র মতিউর এবং ছুরিকাঘাতে রুস্তম নামের একজন নিহত হলে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। এই গণঅভ্যুত্থানের প্রবল চাপে আইয়ুব খান ঘোষণা করেন তিনি আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং নিরাপত্তা আইনে আটক ৩৪ জনকে মুক্তি দিতে সরকার বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৬৯ একটি উজ্জলতম ইতিহাস হিসাবে চিরকাল থাকবে যাতে সারা দেশের ছাত্ররা অবদান রেখেছিল। ৬৯’র এর গণঅভ্যুত্থানে সেদিন সকল ছাত্র সংগঠন একত্রিত ভাবে তাদের নৈতিক কর্তব্য পালন করে ভ্রাতৃত্বের পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তী আন্দোলন গুলোতেও এই ভ্রাতৃত্ব আমাদের সাফল্যের সহায়ক হিসাবে কাজ করেছে। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা নজীর স্থাপন করেছিল। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে চাই যে, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে মূল ভূমিকা পালন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ “ডাকসু’র ” ছাত্রনেতারা সহ প্রায় সকল ছাত্র সংগঠন যাদের নাম এদেশ মনে রাখবে আজীবন। সর্বোপরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অনান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা তাদের জীবন বাজি রেখে সংগ্রামের সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯৫২ এবং ১৯৬৯ সালে সারা বাংলার ছাত্রসমাজ জাতিগঠনে অসমান্যতার পরিচয় দিয়েছে, যা আমাদের অন্য সকল আন্দোলনের জন্য প্রেরণা। এভাবে যদি বর্তমান ছাত্র সমাজ নীতির পক্ষে আপোষহীন থেকে নেতৃত্ব দেয় তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেই।
লেখকঃ সংগঠক।
আ/স/১০/০২/২০২৫/আকাশ